আলমগীর মাহমুদ

কিছুই মিলানো যাচ্ছে না জীবনে।দুইদিনের অভিজ্ঞতা এক নয়।আজ যাকে যেভাবে আবিষ্কার করি ক’দিন পর ভিন্ন উপাখ্যান চোখে পড়ে।ভালবাসা নির্বাসনে ১৯৫০ এর পর।’ভালভাষা ‘ সতীত্ব হারাতে হারাতে সতীনের ভূমিকায়।’ ভালথাকা ‘ই বীর দর্পে মাঠ দখলে নিয়েছে।

আমাদের এখন এককথা ‘অ..পুত সবাইর সাথে ভাল থাকিস। ভাল থাকলেই ভাল থাকতে পারবি।’এমন শিক্ষায় সামাজিক জীবন নির্বাহে চোরের সাথেও ভাল।বাটপারের সাথেও ভাল।সন্ত্রাসীর সাথেও ভাল। ভাল এর সাথেও ভাল।সবাইর সাথে সমানে ভাল থাকতে থাকতে আজ নিজের ভালয় যোগ হয়েছে ( ? )প্রশ্নবোধক চিহ্নের।

এই চিহ্নের অংশীদার বনতে বনতে’ ভাল ‘ও আজ অসুস্থ। হাসপাতালে হাসপাতালে। তারপরও আমরা চলছি।খাচ্ছি,দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি ঝাঁকের কৈ ঝাঁকে মিশে আছি।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিল।রাত তখন দশটা ছুই ছুই।হলিডের মোড়। কক্সবাজার শহরে হোটেলের নাম ছিল হলিডে। ঐ হলিডে ষ্টপজের নামের সাথে মিক্স হয়ে এখন হলিডে হয়ে পড়ে গাড়ীর ষ্টপেজের নাম।হলিডে বললে কক্সবাজারবাসীর কাছে হোটেলের নামের চেয়ে গাড়ীর ষ্টপেজের নামটিই ভাবায় বেশী।বিষয়টাও সেঁজেছেন আমাদের সামাজিক জীবন প্রবাহের আদলে।

ঐ ষ্টেশন থেকে টার্মিনালমুখী টমটমের প্যাসেঞ্জার। সবসিট দখলে। তিল পরিমান নেই টাই।ফজলমার্কেট ক্রসকরতেই দুজন মহিলার সিগনাল, ড্রাইভার গাড়ী থামিয়েই পেছনের সিটে বসা দুজনকে তীর্যক ভাষায় বলছে চাপেন।চেপে বসেন।

পেছনের সিটটায় দুইজন বসতে পারে।ড্রাইভারেরা এইটাতেও তিনজন বসায়।শারীরিক অবস্থা সহনীয় হলে ড্রাইভারের আচরনে ইজ্জত হারানীর ভয়ে লোকজন তেমন কথা বাড়ান না। তিনজনেরই কষ্ট। তারমধ্যে একজনের অবস্থা থাকে ত্রাহি ত্রাহি।

ড্রাইভার এই দুইমহিলাকে নিবেই।পেছনের এদের আপত্তি নেই। তবে তাদের এককথা আমাদের শরীরের সাইজের কারনে বিষয়টা অসম্ভব।আর বসাইলেও দুইজন কেমনে নিবি এইটাতো ডাবলিং। ত্রিফলিং অইলে নাইটকোচে চড়ার মত চোখ ঘুমায় শরীর ঘুমায় না,ঘুমায় না অবস্থা।

ড্রাইভার মানছেই না।নিবেই।তখন পেছনসিটের এরা সাউন্ড দেয় আমাদের শরীরের সাইজের কারনে একজন দেড়জন দেড়জনের ভাড়া পাঁচটাকা হারে দশটাকা বাড়িয়ে দিব।এরপর গাড়ীর চলা শুরু। ড্রাইভারের মুখও চলছে উচ্চ ভলিয়ুমে।

আপনারা আমার দশটাকা লস করলেন।আপনারা আমার দশটাকা লস করছেন।স্বরটা ছিল যথেষ্ট রাগত। প্যাসেঞ্জারের ফিরতিজবাব.. তাইলে আমাদের নামিয়ে দে। ঐ মহিলাগুলোরে নিয়ে যা।

ওরা নেমে গেলে যাচ্ছে ত্রিশ।মহিলাদের কাছে আসবে বিশ।যদি দশটাকা বাড়িয়ে না বলত টমটমে জয়ী হত মহিলা প্যাসেঞ্জার।কারন ওরা মহিলা। পুরুষের কাছে অপরিচিত হলেও পাল্লায় তাদেরটা ঝুক থাকে সহজাত দুর্বলতায়। হউক তাহ মা’র জাত হিসেবে,বোনের জাত বলে,বউয়ের জাতের পাওনা হিসেবে তাতে নেই মোর দু:খ কষ্ট, নেই প্রতিহিংসাও তারপরও কেন তাদের নাম তুললেন প্রশ্ন জাগলে উনার প্রতি শুধুই এক উত্তর মোর ‘অভ্যাসের দোষ ভাই’।

অভ্যাস এমনে এমনে খারাপ অয় না এর পেছনে ছোট খাট ইতিহাস রয়।তবে সে ইতিহাস মনের পরিতাপ বিবেচনায় রেখে সমাজ মন্তব্য করে না ‘ভাল’ আর ‘খারাপ’।বাহ্যিক অবয়বটাই হয়ে দাঁড়ায় বিচারের মাপকাঠি। মানুষ এত ঘটনার গভীরে যায় না।মনের পরিতাপ সমাজে অধরা।অদেখা।অবিবেচ্যই রয়ে যায়।

তারা নেমে যাবার ভয় দেখানোতে ড্রাইভারের ভলিয়ুম ছোট হল ঠিক, তবে থামেনি।প্যাসেঞ্জার কক্সবাজারের কেউ নয় তাদের ভাষায় সেটা স্পষ্ট।এবার তারা তাঁরা বলা শুরু করে।আমাদের এই দেশটায় সবাই পড়ালেখা করে শিক্ষিত হয় কিন্ত বদলায় না।

যারা উপরি নিচ্ছে তারা জিম্মি করছে মানুষ। বাঙ্গালেরটা ধরন যায় শিক্ষিত হয়ে যারা বাটপার তারা বেশী মারাত্নক জঘন্য। সবাই শুধুই টাকা বুঝে।মানবের মানবীয় আচরন তাদের কাছে স্বপ্ন।
প্রকৃতির ব্যবহার বিধি জানে ও না। জানলেও মানতে চায় না।যার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়। বৃষ্টি হবার সাথে সাথে রাস্তাঘাট পানির নীচে।পলেথিনের ব্যাগটা ফেলে ড্রেনে।ময়লার ঝুড়ির ব্যবহার বিধিতে শিক্ষিতেরাই মূর্খ।মূর্খদেরতো নামই মূর্খ।

পৃথিবীর সুষ্টু ব্যবহার বিধি কেউ মানছেই না।তারা বেমালুম ভুলে আছে আমরা পৃথিবীর ব্যবহারকারী মালীক নই।পৃথিবীকে তাদের আজ্ঞাবহ ভাবে।

পৃথিবীর স্বকীয় স্বত্তা তাদের বোধেই অচিন।এই অচিন অর্বাচীনের দাপটে আমরা ও অজ্ঞ হয়েই তাদের সাথে তাল মিলাই।যে যত তাল মিলাইতে ওস্তাদ সে ততবেশী ভাল মানুষ।

কেউ ভাল বুঝাতে গেলে..উত্তর.. যাহ চলছে চলতে দিন। হাঁ বোধক ভাবনা রাখুন।মনে রাখুন “বালির বস্তা দিয়ে স্রোত আটকানো সম্ভব নয় “।যারা এমন ভাবধারার তাদের জানানো প্রয়োজন ‘বালির বস্তা মুল স্রোত টেকাতে হিমসিমে তবে ভাঙ্গন রক্ষায় শক্তিধর।’

সত্যকে শক্তিধর করতে চাইলে ভাববার সময় এখনই।মনে রাখতে হবে…

“রোগ বালাতো আছে দুনিয়ায়।
ভাল থাকার আছে যে উপায়।”

লেখক:-উখিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক।
alamgir83cox@gmail.com